বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮

তুলে রাখা ভালবাসা-সম্পর্কটা পুরনো হলেও ভালোবাসা কিন্তু পুরনো হয় নি


তুলে রাখা ভালবাসা

অনেকদিন পরে হাতিরঝিল আসলাম, তাও বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে আসলাম। পড়াশুনার সুবাদে বাহিরে থাকা হয়, তাই আর বন্ধুদের সাথে বেড়ানোটা আমার লাইফে খুব কম ছিলো। আজকে এসেই মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো। জোড়ায় জোড়ায় কপোলরা এসেছে আর সিংগেল খুবই কম। মনে হচ্ছে এরিয়াতে কেবল আমরাই সিংগেল আছি। কিছুক্ষন পরেই হাতের বাম পাশে চোখ গেলো। একটা মেয়ে আরও কয়েকজন বয়স্ক মহিলার সাথে আসছিলো। তারা হেটে হেটে যাচ্ছিলো, এবং আমার পাশ দিয়ে ক্রস করলো। মেয়েটা ক্রিম কালারের একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া ছিলো আর হিল পড়েছিলো। চুলগুলো ছাড়া ছিলো আর ঠোটে গাড় করে লাল লিপস্টিক দেওয়া ছিলো।

মনে হচ্ছে মেয়েটার উপরে ক্রাশ খেয়ে গেছি, তবে সমস্যাটা হলো মেয়েটার কালচার। আমাদের ফ্যামিলিতেতো এসব কখনও এক্সেপ্ট করবেনা।ইস্ মেয়েটা যদি সালোয়ার কামিজ বা শাড়ী পড়তো, তাহলে কোন সমস্যা ছিলোনা। যাই হোক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে সব ইমোশন ব্রিজ থেকে কিক মেরে পানিতে ফেলে দিলাম।

প্রায় মাসখেনেক পরে আমার এক বন্ধু কোরিয়া থেকে প্রায় ৬ বছর পরে এলো। তার কিছুদিন পরেই এক বিকেলে সে আমার চেম্বারে আসলো।

-আরে দোস্ত তুই, এতোদিন কোরিয়া ছিলি, তারপরেও আমার চেম্বার চিনে এলি কিভাবে?
>দোস্ত, তুই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল গেলেও তোরে খুজে বের করুম আমি।
-হুম, তো কি অবস্থা, কেমন আছিস তুই, বাসার সবাই কেমন?
>এইতো আছি, সবাই ভালো কিন্তু বোনটার শরীরটাই খুব খারাপ। তাইতো তোর চেম্বারে আসা।
- ওহ, তাহলে এখানে নিয়ে আয়, আমি দেখছি।
>নাহ দোস্ত, খুবই সিরিয়াস অবস্থা, এখানে আসতে পারবেনা সে।
কি আর করা, অগত্যা বন্ধুর অনুরোধে ওদের বাসায় যেতে হলো।

সেখানে যেয়ে তো আমি পুরাই টাস্কিত, আরে এইতো সেই মেয়ে যাকে হাতিরঝিল দেখেছিলাম, আর আরও অবাকের ব্যাপার হলো, সে একটা স্যান্ডু গেঞ্জি পড়ে দড়ি লাফ খেলছিলো।
>দোস্ত, এই আমার বোন। কিছু বুঝলি?
- হ্যা দোস্ত, আমাকে একটু সময় দে, কালকে আমি জানাচ্ছি।
>আচ্ছা দোস্ত।
ফ্রান্সে আমার এক বন্ধু থাকে, প্রফেসর ড. জ্যানেট গ্রিন (গাইনি & সেক্স বিভাগ)। তার সাথে ওর ব্যাপারে আলাপ করলাম। সে বললো মেয়েটার হরমোনের ঘাটতি আছে শরীরে, তাই এমন পুরুষালি আচরন করছে।

পরেরদিন বন্ধুকে কল দিয়ে বললাম বোনকে নিয়ে চেম্বারে আসতে, ওর চিকিৎসা শুরু হবে আজকে থেকে। ৩ মাসে হাড়ের গোড়ায় ওকে ৬ টা হরমোনের ইনজেকশন দিলাম (ইঞ্জেকশনের নাম বলা যাবেনা, আপনারা জেনে গেলে আমাদের বিজনেস শেষ)

৩ মাসের চিকিৎসা শেষ হলো, আমিও মনে মনে একটা প্রশান্তি পেয়েছিলাম।

চিকিৎসার প্রায় ২ মাস পরে আবার বন্ধুর ফোন। যেভাবেই হোক আজকে ওদের বাসায় আসতে হবে। আজকে আর না করলামনা, নিজের ইচ্ছেতেই গেলাম।

আজকে সে খুব সুন্দর করে শাড়ী পড়ে ঘোমটা টেনে পানির গ্লাস নিয়ে আসছে।
মনে হয় এখন আর আমাদের পরিবারে একে নিয়ে কোন প্রব্লেম হবেনা।
আমার ইমোশন গুলা তো সব হাতিরঝিলে ব্রিজের নিচে সাঁতরাচ্ছে, কেউ একটু তুলে দিয়ে যান প্লিজ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন