পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে ভালোবাসা

আজ হঠাৎ করেই তোমার কথা মনে পড়ে গেলো।মনে সব সময়ই পড়ে, কিন্তু আজ একটু বেশিই ভাবছি তোমার কথা।আজ তোমার স্মৃতিগুলো একটু বেশি নাড়া দিচ্ছে মনের মধ্যে........

ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসাকে বেঁধে যে রাখে.

বর্ষা আসবে আসবে ঠিক এমন একটা সময়। নতুন ক্যাম্পাসে নতুন সেমিষ্টার শুরু। সেমিষ্টার শুরু আবার তোমার সাথে আমার দেখা হবে......

তবুও তুমি যে আমার কাছে নিঃশ্বাসের চেয়েও অনেক বেশি প্রিয়

বর্ষা আসবে আসবে ঠিক এমন একটা সময়। নতুন ক্যাম্পাসে নতুন সেমিষ্টার শুরু। সেমিষ্টার শুরু আবার তোমার সাথে আমার দেখা হবে......

তোমার ভালোবাসা কুড়িয়ে কুড়িয়ে ভরে গেছে আমার শাড়ির আঁচলে মোড়ানো কোচড় তবুও শেষ হয়না ভালোবাসার প্রহর !

মন যদি আকাশ হত তুমি হতে চাঁদ,, ভালবেসে যেতাম শুধু হাতে রেখে হাত.. সুখ যদি হৃদয় হত তুমি হতে হাসি,, হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিয়ে বলতাম তোমায় ভালবাসি..

যে আমি কোন দিন মাথা তুলে আকাশ দেখিনি সেই আমি আজ আকাশের তারার মাঝে তোমার ছবি একেঁছি

মনটা দিলাম তোমার হাতে যতন করে রেখো,হৃদয় মাঝে ছোট্ট করে আমার ছবি এঁকো.স্বপ্ন গুলো দিলাম তাতে আরও দিলাম আশা , মনের মতো সাজিয়ে নিও আমার ভালবাসা......

শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আমি ভালবাসি নাহিদ - অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে



'নাহিদ' - সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। সারাদিন কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই ডাকে। নেকা মেয়ে গুলা যেন নাহিদ বলতেই অজ্ঞান। অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার।

বি.বি.এ -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। নাহিদ আমার ১বছর এর সিনিয়র। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ও হঠাৎ একদিন আমকে প্রপস করে বসলো। কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। পেছন ঘুর ঘুর করে বিরক্ত করার ছেলে ও না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বারটা যোগাড় করেছে।

প্রতিদিন রাতে শুধু একটা করে মেসেজ করত কখনো ফোন করেনি। কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো পড়তাম প্রতিদিন। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করলো। মনের আড়ালেই কখন ভাল লাগার বীজ বপন করে বসে আছি বুজতেই পারিনি।

পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরদিন ভার্সিটিতে মনে মনে ওকে খুজতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি সিমির খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে। বুকের ভেতর চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কিছু চিন্তা না করেই সবার সামনে বলে দিলাম ওকে ভালবাসার কথা। সাথে সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে দিল।

খানিকটা অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম মেসেজ না করা, আমাকে জেলাস করা, পুরোটাই সাজানো ছিল। আর তার প্রধান হাতিয়ার ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সিমি। চোখের জলটা থামাতে পারলাম না। সবার সামনেই কেদে দিলাম। একটা কান্না মানুষকে এতটা সুখ দিতে পারে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম।

শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট সুখের সাত রঙ মিশিয়ে একি স্বপ্ন দুটি হৃদয় দিয়ে আঁকা। ও আমাকে সুখ পাখি বলে ডাকে। ওর পাগলামি গুলা যেন একি সাথে আমকে কাদাই আবার হাসাই। অদ্ভুত একটা অনুভুতি।

আমকে নিয়ে ওর গান। স্বপ্নের ভেলায় চড়ে তারার দেশে যাওয়া। হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। মাঝ রাতে আমকে দেখার নাম করে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা। ক্লাস ফাকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া। একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন করে গড়া। সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার একটা পৃথিবী সুখের স্বর্গ ও।

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ওর বি.বি.এ শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম। যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত সেটাই হল। আমার আর নাহিদ এর সম্পর্কের কথাটা বাসাই জানা জানি হয়ে গেল।

আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সোহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর এর রিলেশন বিয়ের এক বছরের মাথাই ছাড়াছাড়ি। এ ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক। সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। ফোনটাও আব্বুর কাছে। এক কথায় বন্দি আমি।

আপুর ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল এখনো সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু বলা মানে তাকে মৃত্যুর পথে একধাপ এগিয়ে নেয়া। কিছুই বলতে পারলাম না।

এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে। নিঃশব্দে কাদা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আমার।

এদিকে নাহিদ পাগল এর মত চেষ্টা করছে আমার সাথে যোগাযোগ করার। কোন উপায় না পেয়ে সিমিকে আমার বাসায় পাঠালো খোজ নেবার জন্য। মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে। এত বড় অন্যায় কি করে করবো আমি। কি করে কাদাবো এই মানুষটাকে। ঠিক করলাম পালিয়ে যাব। সবাইকে ফাকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বেরও হলাম। কিন্তু আপুর চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর কষ্ট লজ্জা সব কিছুর ছবিটা চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো। পারলাম না।

একটা ফোন ফ্যাক্স এর দোকান থেকে কাদতে কাদতে নাহিদ কে সরি বলে অর্ধেক রাস্তা থেকেই আবার বাসাই ফিরে আসলাম। এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার সবাই চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বলিনি সে আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাদলাম। কান্নাই যেন একমাত্র সঙ্গী এখন। না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না পারছি নাহিদকে কাদাতে।

পরদিন সকালে রাজ্জাক আঙ্কেল এর একটা ফোন আমার জীবনটাতে একই সাথে মুক্তি আর পঙ্গুত্ব দান করলো। ডাক্তার এর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। কাঁদবো না মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলব বুজতে পারলাম না। শুধু স্থব্দ হয়ে থাকলাম।

নাহিদ এর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ আমার নেই। সিমির মাধ্যমে ও সব কিছু জানলো। আর সব জেনে শুনেই ওর আব্বুকে দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল আমার বাসাই। প্রথম বার ফিরিয়ে দিলেও এবার আর পারল না। কারণটা সহজ। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা লজ্জিত হয়ে নাহিদ এর এক আকাশ সমান ভালবাসার কাছে হার মানল। পাওয়া না পাওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের আর সুখের দিন এটা।

পরদিন নাহিদ এর অনুরোধেই আব্বু আম্মুর অনুমতি নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । কথা বলার শক্তিটা যেন হারিয়ে ফেলছি। কাপতে কাপতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

ও কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল- আমি শুধু তোমাকে চাই হেনা আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই বিশ্বাস করো আমার শুধু তোমাকে হলেই চলবে। বল আমকে আর কখনো ছেড়ে যাবা নাতো ?

উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। ওর এই সীমাহীন ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগণ্য। কোথাই রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা। কি দিয়ে শোধ করবো আমি। সুখের কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। চোখের সামনে থাকা স্বর্গটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাদলাম। ও হাত দিয়ে চোখের জ্বল টুকু মুছে দিল।

ওকে হয়তো বাবা হবার সুখটা কোন দিনও আমি দিতে পারবো না। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবো না ওকে। তাতে আমার মরন হলেও হাসতে হাসতে মেনে নেবো সেই মরণটাকে।

আমি ভালবাসি নাহিদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে <3

কলেজ জীবনের প্রথম প্রেম

Related image

কলেজের প্রথম বছর ছিল… পরিচয় হল… বন্ধুত্ব হলো… ভাল লাগলো… তারপর প্রেম নিবেদন… তারপর শুধুই ভালবাসা| নাহ্! এত নিরামিষ ছিল না আমাদের গল্প| এত নিরামিষ হলে হয়তো এভাবে সাতটা বছর পার করে দিতে পারতাম না দুজনে|

সেই সাত বছর আগের কথা… কিছুদিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছি| হঠাৎ অপরিচিত কারো একটা ই-মেইল নজরে পরলো| খুব সহজ একটা ধাঁধা লেখা ছিল ই-মেইলে| সাথে একটা মোবাইল নাম্বারো ছিল, আর লেখা ছিল যদি ধাঁধার উত্তর জানা থাকে তাহলে যেন সেই নাম্বারে পাঠিয়ে দিই| ধাঁধার উত্তর লিখে পাঠিয়ে দিলাম আর জানতে চাইলাম তার পরিচয়, তবে ই- মেইলের উত্তর ই-মেইলেই…

মোবাইলে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা একটা অপরিচিত মানুষকে দিয়ে বিপদে পরবো নাকি!!?? কিছুদিন পর আবিষ্কার করলাম ছেলেটা আমার সেকশনেরই! কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কে সেই শাখামৃগ যে আমাকে এত দুশ্চিন্তায় ফেলে দূরে বসে মজা নিচ্ছে!!?? পরে জানতে পারলাম যার দিকে কখোনো চোখই পরেনি, যার নামটাও কখোনো জানা হয়ে ওঠেনি ছেলেটা সেই… সানিয়াত… সানিয়াত মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|

বন্ধুত্ব হলো… খুব ভাল বন্ধুত্ব হলো… রাতে মোবাইলে কথা না বললে চলতোই না… ধীরে ধীরে কখোন যে বন্ধুত্বটা দুর্বলতা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! হয়তো নিজেকে বা ওকে বুঝতে দিতে চাইতাম না অনুভূতিটা| ভয় হতো… যদি বন্ধুত্বটাই হারিয়ে ফেলি!?

তবু মনের মাঝে কোন এক কোণায় হালকা ব্যথা অনুভূত হতো, যখোন ও ঐ সেকশনেরই সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার কথা বলতো| হালকা ব্যথা বললে বোধহয় ভুল হবে… আগুনের একটু আঁচ লাগলেই যেমন জ্বলা শুরু করে… আমারো তখোন ভেতরটা জ্বলতো! একটা কথা আছে না… “বুক ফাটে তাও মুখ ফোটেনা”… ঠিক ঐ রকম!

জানুয়ারী ২০০৫ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫… আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাড়ো হলো… আমাদের ছোট খাট পছন্দ অপছন্দ শেয়ার করা হলো| যদিও আমাদের ক্লাসমেটদের ধারণা আমরা তখোন থেকেই প্রেম করি| ধারণাটা আরো গাড়ো হয়েছিল যখন ও ক্লাসের একটা ছেলেকে আমাকে উত্তক্ত করার জন্য ঝাড়ি দিয়েছিল| ধারণাটা নি্শ্চিত সন্দেহের রূপ নেয় যখন আমি ওর হাতে কলেজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা চিঠি ধরিয়ে দিই|

চিঠিতে কি লিখেছিলাম মনে নেই, তবে সেটা কোনো প্রেমপত্র ছিল না এটা নিশ্চিত… সেটা ছিল ওর ওপর আমার অভিমানের বহিঃপ্র্রকাশ মাত্র| ও আমাকে এখন প্রায়ই বলে চিঠিতে নাকি অসংখ্য বার আমি লিখছলাম “আমি তোমার খুব ভাল Friend হিসেবে বলছি…”| সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো... চিঠিটা ওর পকেটে ছিল... বৃষ্টিতে আমার চিঠিটা নাকি ভিজে একাকার|তার কিছুদিন পর আমি আমার ২য় বর্ষে কলেজ বদলিয়ে ফেললাম| ফিরে গেলাম আমার স্কুলেরই কলেজ শাখায়|

তারপর আমার মোবাইল হারিয়ে গেল… সাথে ওর নাম্বারটাও| সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ| মাঝেমাঝে ই-মেইল Check করতাম… যদি ও কিছু পাঠায়… কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই পেতাম না| নিজেকে সান্তনা দিতাম… এই বুঝি ভাল হলো… Out of sight, out of mind!

শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

মানিব্যাগ ছাড়া কি প্রেম হয়


- ওই
- কি ?
- চলো।
- কোথায় ?
- বাসায় যাবো না ?
- আরেকটু থাকো না আমার সাথে।
- না গো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করলে বাসায় বকা শুনতে হবে।
- আরেকটু থাকো না, প্লিজ।
- নাহ…. চলো

কথাটা বলেই বিপলুর হাত ধরে টান দিলো নাবিলা। গোমরা মুখ করে নাবিলার একটু পিছু পিছু হাটতে শুরু করল বিপলু। নাবিলাকে পাগলের মত ভালোবাসে বিপলু। নাবিলাকে এক নজর দেখার জন্য বিপলু প্রতিদিন ১৬ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে যায়।

আর ঢাকা শহরের ১৬ কি.মি. মানে ২/৩ ঘন্টার জ্যামে বসে থাকা। কিন্তু তবুও বিপলু নাবিলাকে একটু দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম উপেক্ষা করে নাবিলার কোচিং এর সামনে যায়। কখনো কোচিং এর সামনে ২ মিনিট এর জন্য দেখা, কখনো বা কোচিং থেকে বাসায় যাওয়ার পথে নাবিলার পিছু পিছু হাটা, কখনো বা নাবিলার জানালার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করা, কখনো বা নাবিলাকে দেখতে গিয়ে নাবিলার আপুকে দেখে চলে আসা, আবার কখনো বা নাবিলার আন্টির দৌড়ানি খেয়ে পথ হারিয়ে ফেলা।

এভাবে চলত বিপলুর প্রত্যেকটা দিন কিন্তু নাবিলাকে বড়জোর এক নজর দেখা ছাড়া কোন কথাই হতো না তাদের। তবুও বিপলু প্রতিদিন যেত একটি বার নাবিলাকে দেখতে। সপ্তাহের একটা দিনই তাদের এক সাথে ঘুরা হয় কিন্তু আজ মাএ এক ঘন্টা সময় দেওয়ায় বিপলু মুখটা ভার করে রাখল। হঠাৎ পিছন থেকে বিপলু

- ওহ
- কি হলো ?
- এতো তাড়াতাড়ি হাটছো কেন ? বাসায় কি তোমার ছেলেমেয়ে রেখে আসছো নাকি ?
- দেখো অনেক দেরি হয়ে গেছে। যেতে হবে।
- আমার পা ব্যাথা করছে, আমি হাটতে পারছি না। একটু আস্তে হাটো না, প্লিজ।
- তোমার পা ব্যাথা করছে না এটা আমি ভালো করেই জানি। এটা তোমার পুরানো অজুহাত আমাকে দেরিতে বাসায় পাঠানোর জন্য।
- জানো যেহেতু আরেকটু থাকলেই পারো ?
- দেখো বুঝতে চেষ্টা করো। দেরী করলে আপু বকা দিবে।
- আপুর কি তোমার পিছনে ছাড়া আর কোন কাজ নাই ?
- দেখো আপুর নামে কিছু বলবা না কিন্তু।
- আচ্ছা বলব না। চলো ফুসকা খাই। কতো দিন একসাথে ফুসকা খাই না। চলো ওকে,,,,,,,done……thank you……..thank you……. thank you…….!!!!

কথাগুলো বলে নাবিলাকে কিছু না বলতে দিয়েই ফুসকার দোকানে দিকে দৌড় দিলো বিপলু। বিপলু জানে নাবিলাকে কথা বলার সুযোগ দিলে “না” ছাড়া কিছুই বলবে না। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করল বিপলু। মানিব্যাগে মাএ ১১৫ টাকা আছে। দুই প্লেট ফুসকার অর্ডার দিলে রিকসা ভাড়া আর বিপলুর বাস ভাড়া হবে না।
তাই বিপলু এক প্লেট ফুসকার অর্ডার দিয়ে টেবিলে এসে বসে পড়ল। নাবিলা এসে বিপলুর পাসে বসল। একটু পরে এক প্লেট ফুসকা দিয়ে গেল মামা।

- কি ব্যাপার এক প্লেট কেন ?
- তোমার জন্য।
- তোমার টা ?
- ও আসলে ফুসকা খেলে আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই আমি এই সব খাই না।
- ফুসকা খেলে তোমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ???
- তেল দিয়ে ফুসকা বানায় তো। আর তেলের কিছু আমি খেতে পারি না।
- তাহলে অন্য কিছু নেও !
- আরে না আমার তেমন একটা খিদা নাই। তুমি খাও তো।
- তাহলে বলছো কেন একসাথে খাবো ?
- এই যে একসাথে বসে আছি, কথা বলছি, এই তো অনেক। আমার আব্বু বলে খাওয়ার সময় কথা বলতে নাই, খাও তো তুমি।

তারপর তাদের মাঝে কিছুক্ষণ কথা চলতে থাকল। নাবিলা বিপলুকে ফুসকা খাইয়ে দিতে চাইল কিন্তু বিপলু ফুসকা খেল না। বিপলু শুধু নাবিলার একটা হাত ওর হাতের মাঝে রেখে নাবিলাকে অনুভব করতে লাগল আর নাবিলার কথা শুনতে লাগল।

একট পরে বিপলু ফুসকার বিল (৪০টাকা) দিয়ে নাবিলার হাতে হাত রেখে ষ্টান্ডের দিকে গেল। ষ্টান্ডে গিয়ে বিপলু একটা রিকসা নিল এবং দুজনে উঠে বসল।

- কি ব্যাপার তুমি উঠস কেন ?
- তোমার সাথে যাব বলে।
- আমার সাথে যেতে হবে না। তুমি এখান থেকে বাসে উঠে বাসায় চলে যাও নাহলে তোমার বাসায় যেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
- হলে হোক, চলো তো।
ওই মামা, আপনি চালান (রিকসাওয়ালাকে বলল বিপলু)
- তুমি আমার সাথে আমার বাসা পযর্ন্ত যাবা আবার ব্যাক করে বাসষ্টান্ড আসবা!! কেন এত কষ্ট করবা ??
- দূর কিসের কষ্ট। তুমি আমার হাতটা ধরো আর আমার কাধে মাথা রাখো দেখো আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আর তাছাড়া জীবনের শেষ মুহূর্ত পযর্ন্ত আমি তোমার পাশে থাকতে চাই আর তোমাকে অনুভব করতে চাই।
- তুমি এত পাগল কেন ?
- আমার পাগলির জন্য।
- সবসময় এই ভাবে ভালোবাসবে তো ?
- সারাজীবন…..!!!!
- তিন সত্যি (প্রমিস)
- তিন সত্যি (প্রমিস)
সারাটা পথ বিপলু নাবিলার হাত ধরে রাখল আর নাবিলা বিপলুর কাধে মাথা দিয়ে রাখল। নাবিলার কাছে বিপলুর শুধু এই চাওয়া, “বিপলুর হাতটা ধরবে আর কাধে মাথা রাখবে”। দেখতে দেখতে নাবিলার বাসা চলে আসল,
- আচ্ছা আমি তাহলে যাই ?
- যাও।
- তুমি এই রিকসায় করে চলে যাও।
মামা ওরে আবার বাসষ্টান্ডে নামিয়ে দিয়েন। (রিকসাওয়ালাকে বলল নাবিলা)
- আচ্ছা আমি যাব।, তুমি যাও।
- ওকে।
- কাল দেখা হবে।
- আবার ?
- কোচিংয়ের সামনে !!
- তুমি পারও বটে। পাগল একটা।
- Yes I’M.....
- byeee, byeee
নাবিলার বাসায় ঢুকা পযর্ন্ত বিপলু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। তারপর মামাকে বলল,
- মামা কত হয়েছে ?
- ৫০ টাকা।
- (মানিব্যাগটা বের করে) এই নেন।
- কেন আপনী যাবেন না ?
- না মামা, আমার একটু কাজ আছে।
রিকসাওয়ালা চলে গেল। বিপলু মানিব্যাগটার দিকে একবার তাকালো। মানিব্যাগে মাএ ২৫ টাকা আছে। হাফ পাস দিয়ে যদি বাসে করে বাসায় যেতে হয় তাহলেও মিনিমাম ২০ টাকা লাগবে,,, তাহলে কি আর রিকসায় উঠার টাকা থাকে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বিপলু একটু সামনে থেকে ৫ টাকার বাদাম কিনল। তারপর কানে একটা ইয়ারফোন লাগিয়ে উল্টো পথ ধরে বাসষ্টান্ডের দিকে হাটতে শুরু করল......
.
কিছু কথা :অনেকেই বলে থাকে ছেলেরা ভালোবাসতে পারে না। আসলে কিছু কিছু ছেলেদের ভালোবাসা খুব কমই প্রকাশ প্রায়। ছেলেদের ভালোবাসা খুজে পাওয়া যায় তাদের কাজ-কর্মে, কথা-বার্তায়। কিন্তু যা আজকাল অনেক মেয়েই খুজে পায় না।

নাবিলের সঙ্গে অর্চির প্রথম দেখা

Image may contain: 2 people


নাবিলের সঙ্গে অর্চির প্রথম দেখা হয় ক্যাডেট কোচিং করতে গিয়ে। ভালো ছাত্রী হিসেবে সুনাম ভালোই ছিল অর্চির। একটু নিজের মতো থাকতেই পছন্দ করতো ও। কোচিং এ দুর্দান্ত ইংলিশ জানা ছেলে নাবিলকে দেখার পর থেকেই কেন যেন রাগ লাগতো অর্চির। প্রথম প্রথম নাবিল কে সহ্য হতো না ওর। নিজের প্রতিযোগী মনে হতো। এরপর কেন যেন আস্তে আস্তে একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো। বন্ধুত্ব হয়ে গেলো কিছুদিনের মাঝেই। দুজনের বন্ধুত্ব যখন তুঙ্গে, হঠাৎ করেই নাবিলের পরিবার শহর বদলে চলে গেলো। অর্চি হয়ে গেলো বন্ধুহীন। ভার্সিটিতে ভর্তির পর পর হঠাৎ একদিন নাবিলের সাথে দেখা হয়ে যায় অর্চির। বহুদিনের পুরনো বন্ধুত্বটা ভালোবাসার সম্পর্কে পরিণত হয় খুব অল্প সময়েই  

কী হবে এরপর? নাবিল আর অর্চির ভালোবাসা কি হতে চলেছে পূর্ণ?
কয়েকমাস পর হঠাৎ অর্চি একদিন ভার্সিটিতে আসার পথে এক্সিডেন্ট করে। হাসপাতালে নেওয়া হয় ওকে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে প্রায় দুই মাস চিকিৎসায় থাকতে হয় অর্চিকে। ডাক্তার জানায় অর্চির মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কিছু অংশ অচল হয়ে গিয়েছে। ওর আর সুস্থ হওয়া সম্ভব না। এই ঘটনা জেনে অর্চির পরিবার ও নাবিল ভয়ানক মুষড়ে পড়ে। এদিকে অর্চির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে নিজেকে কেমন ঘর বন্দী করে ফেলে ও। নাবিলের পরিবার জানায় এমন অসুস্থ মেয়েকে তারা ঘরে আনতে চায় না। অর্চির পরিবার নাবিলকে জানায়, নাবিল যেন অর্চিকে ভুলে যায়। পরিবারের অমতে ওদের বিয়ে করার কোন প্রয়োজন নেই 

কী হবে এখন? নাবিলের পরিবারই কি কোনদিন মেনে নিতে পারবে অর্চিকে? 
ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার পাত্র নয় নাবিল। নাবিল তার বাসায় জানিয়ে দেয় বিয়ে করতে হলে সে একমাত্র অর্চিকেই করবে, অন্য কাউকে নয়। নাবিল প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে অর্চির সাথে দেখা করতে যায়। অর্চিকে বই পড়ে শোনায়, গান শোনায়, বেঁচে থাকতে উৎসাহ দেয়। অর্চি ঘুমিয়ে গেলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে- তোমার সুখের দিন গুলোতে আমি ছিলাম সবচেয়ে কাছের? এখন আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো? এভাবে কেটে যায় প্রায় একটা বছর। অর্চির প্রতি নাবিলের এই ভালোবাসা দেখে একসময় নাবিলের পরিবার সবকিছু মেনে নেয়। নাবিলের ভালোবাসার শক্তির কাছে পরাজিত হয় সব বাধাই। অসম্ভব সুন্দর একটি দিনে অর্চি আর নাবিলের বিয়ে হয়। নাবিল জানে অর্চির সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তার কথা। তবুও সে মন থেকে অর্চিকে ভালোবেসে যায় 
এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে খুব সকালে অর্চির হারিয়ে যায় নাবিলকে ছেড়ে। বিয়ের পর অর্চি বেঁচে ছিল মাত্র তিন মাস। নাবিল এখনও অর্চিকে ভালোবেসেই যাচ্ছে 

অর্চি যেখানেই থাকুক না কেন ভালো থাকুক সব সময়। অর্চিকে ঘিরে থাকুক নাবিলের ভালোবাসা। এই ছিল নাবিল আর অর্চির কাছে আসার সাহসী গল্প    

হ্যাঁ বালিকা তোমাকেই বলছি



হ্যাঁ বালিকা তোমাকেই বলছি।।
আমি একটা পাগলিকে খুব ভালোবাসি জানো??
জানো পাগলিটাকে না আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি।। কিন্তু জানো পাগলিটা না আমায় একটুও ভালোবাসে না।। আমি তো পাগলিটার কাছে তেমন কিছু চাইনি।।

আমি চাইনি তার কাছে অফুরন্ত ভালোবাসা,, আমি তো চাইনি তাকে কাছে পেতে।। আমি তো শুধু চেয়েছি এক শিশির বিন্দু ভালোবাসা।। 

আমি বলছি না আমার সাথে প্রতিদিন দেখা করতে হবে শুধু বলছি প্রতিদিন একটু সময় করে আমার সাথে কথা বললেই হবে।। আমি বলছি না যে আমার সাথে প্রতিদিন ঘুরতে যেতে হবে শুধু এটাই বলব সারাজীবন আমাকে তোমার পাশে থাকার সুযোগ দিলেই হবে।। আমি চাইনা তোমার সুখের ভাগিদার হতে শুধু চাই তোমার দুঃখ গুলকে আমার করে নিতে।। আমি চাইনা তোমাকে ছুতে শুধু চাই তোমার ওই মায়া ভরা চোখে হারিয়ে যেতে।।

আমি চাই সারাজীবন তোমার পাশে থেকে তোমাকে ভালোবাসতে।।
আমি জানি আমার চাওয়া গুলো কখনও পূরণ হবে না।। কেন জানো বালিকা কারন আমি যে পাগলিটাকে পাগলের মত ভালোবাসি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।। আবার সে যাকে ভালোবাসে সে হয়তো অন্য কারো।। এমন কেন হয় বলতে পার বালিকা??

জানো বালিকা আমি না এততা কষ্ট পেতাম না যদি পাগলিটা তার ভালোবাসার মানুষকে পেত।।
তুমি জানো বালিকা এই পৃথিবীর কেউই সুখি না।। সবাই সুখি হওয়ার অভিনয় করে।। যে যত ভালো অভিনয় করতে পারে সে তত ভালো থাকতে পারে।।

আচ্ছা বালিকা তুমি কি জানো আমার ভালোবাসার পাগলিটা কে??
তুমি হয়তো ভাবছো পাগলিটা অন্য কেউ না বালিকা সেই পাগলিটা তুমি।।
হুম আমি তোমাকেই খুব ভালোবাসি ভালোবাসবো ভালোবেসে যাব।।।।

ভার্সিটির লাইব্রেরী রুমে প্রেম

Image result for ভার্সিটির লাইব্রেরী রুমে প্রেম

ভার্সিটির লাইব্রেরী রুম।গুড়ি গুড়ি কথার আওয়াজ হচ্ছে চারপাশে।পরিমিত মাত্রায় এসি চলছে।তবু বেশ শীত শীত লাগছে রাহাতের।লাইব্রেরীগুলোতে আজকাল পড়ালেখার চেয়ে আড্ডা হয় বেশি।তবু কেউ কেউ পড়তে আসে।যেমন এসেছে মেয়েটি।রোজ পূর্ব দিকের কোনার সিটটাতে বসে ও।হাতের কাছে থাকে রাজ্যের বই।এই মেয়ের চোখে মুখে পড়ুয়া আঁতেলের কোন ছাপ নেই।

তবু মেয়েটা বেশ পড়ুয়া জানে রাহাত।গত তিন মাস ধরেই মেয়েটাকে লক্ষ্য করছে সে।ক্লাস শেষের পর ও লাইব্রেরীতে এসে বসে থাকে।মাঝে মধ্যে এক দুইটা বই নেয়।সেগুলো আর পড়া হয় না ওর।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অগোচরে মেয়েটাকেই দেখে।ওকেই ভাবে।মেয়েটা চশমা পরে।এই মেয়ের পরার দরকার ছিল গোল চশমা।মাথার চুলগুলো থাকবে দুই বেণী করা।

তাহলে পড়ুয়া স্বভাবের সাথে মানাতো।তবু ব্যাংস করে কাটা চুল,ফুল ফ্রেমের চারকোনা চশমা সবই অদ্ভুত সুন্দর ভাবে মানিয়ে গেছে ওর সাথে।নোট তোলার সময় তিন রঙের কলম নিয়ে বসে মেয়েটা।একে দেখলেই পড়ালেখার একটা লিলুয়া ইচ্ছা জাগে রাহাতের।আপাতত মেয়েটার হাতে ডাইন্যামিক সার্কিট নেটওয়ার্কিং এর একটা বই।তার মানে আর কিছুক্ষণ বাদেই চলে যাবে মেয়েটা।

বিষয়টাতে ওর খুব আগ্রহ আছে বোধহয়।প্রতিদিনই যাওয়ার আগে মিনিট বিশেক এই বিষয়ের বই পড়ে ও।ঘড়ির কাটা এত দ্রুত চলে কেন!ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রাহাত।তবু ও জানে ওর করার কিছু নেই।এসব মেয়েদের ভালো বন্ধু হওয়া যায়,নোট শেয়ার করা যায়।কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব দেয়া যায় না।

পড়ুয়া মেয়েদের সম্পর্কে প্রথম ধারণা হয় ক্লাস নাইন এ থাকতে।রাহাতের বন্ধু ইমন পছন্দ করত স্কুলের সেকেন্ড গার্ল কে।কিন্তু বলার সাহস করতে পারত না।শেষমেষ রাহাতের কাঁধে দেয়া হয় কথা বলার দায়িত্বটা।সেদিন ছিল ফিজিক্স পরীক্ষা।জঘন্য রকমের একটা পরীক্ষা শেষে ও আর ইমন অপেক্ষা করছিল মেয়েটার জন্য।নিতুকে আসতে দেখে এগিয়ে যায় রাহাত।
-এক্সকিউজ মি
-আমাকে বলছেন?
-জী।তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছি।
-কি কথা বলবেন তা তো জানিই।পরীক্ষার সময় এসব চিন্তা ভাবনার সময় পান কোত্থেকে?আজকের প্রশ্নটা কি কঠিন হয়েছে দেখেছেন?সেসব দেখবেন কেন।সেসব দেখলে তো এরকম আজাইরা কাজ করতে পারবেনা না।কি বলার আছে বলেন দেখি।

এত গুলো কথা শুনে আর বলার কিছু পায়না রাহাত।চলে যাবার সময় মেয়েটা আবার ডেকে বলে,"খুব তো খুশি মনে এসেছিলেন কথা বলতে।ফিজিক্সে কত পেলেন খাতা পাওয়ার পর জানাতে আইসেন।"

সেবারের পরীক্ষায় রাহাত পায় ৪৩।এই নাম্বার নিয়ে কোন মেয়ের সামনাসামনি হওয়া যায় না।এর পরের বছর অবশ্য ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে পুরস্কার পায় রাহাত।তবু ভালোর উপর খারাপ ধারণা যতটা সহজে স্থান পায় খারাপ ধারণা মুছে ভালোর জায়গা ততো সহজে হয়না।

লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে নিচে দাঁড়াল রাহাত।এই মুহূর্তটায় নিজেকে খুব অসহায় লাগে রাহাতের।প্রেম ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।একটা প্রক্রিয়ার মাঝে দিয়ে তা ভালোবাসায় রূপ নেয়।রাহাত জানে সে এখন সেই প্রক্রিয়ার মাঝে দিয়েই যাচ্ছে।নিজেকে খুব করে আটকানোর চেষ্টা করে রাহাত।নিজের অনুভূতিগুলোতে বাঁধ দিয়ে রাখার এক ব্যর্থ চেষ্টা।মধ্যবিত্ত সাধারণ ছেলেগুলোর জীবনে প্রেম ভালোবাসার মত অসহায়ত্বের বিষয় আর নাই।

এদের কাউকে ভালো লাগতে নেই,কারো ভালো লাগার কারণ ও হতে নেই।সব ক্ষেত্রেই বুকে বিঁধে থাকা কাঁটার মত চিন চিনে ব্যথাটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।অনুভূতিগুলোকে পাশ কাটিয়ে,না দেখার ভণিতা করে।

ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।এ বৃষ্টি কখন থামবে কে জানে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।ক্ষণিক বাদেই নিচে নেমে এলো মেয়েটা।রাহাতের পাশে দাঁড়াতেই একধরনের ঘোরের মধ্যে চলে গেলো ও।প্রতিবারই এ ব্যাপারটা ঘটে ওর সাথে।নামের সাথে খুব কম মানুষের মিল থাকে।এ মেয়েটার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন।মেয়েটার নাম পুষ্পিতা।

মেয়েটা আশেপাশে থাকলেই একধরনের সুবাস পাওয়া যায়।চন্দ্রগ্রস্থ রাতে হাসনাহেনার তীব্র নেশা ধরানো সুবাস।এটা সত্যি নাকি মিথ্যা জানেনা রাহাত।আজ হঠাৎই ঘোরের মাঝে ধাক্কা খেয়ে উঠে মেয়েটির কথা শুনে

-আজকের ওয়েদারটা খুব সুন্দর না?
-জী?আমাকে বলছেন?
-আপনি ছাড়া কেউ আছে নাকি এখানে?
-রাহাত অনুভব করছে হঠাৎ করেই হৃদস্পন্দনটা বেড়ে গেছে।তবু নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল তা অবশ্য ঠিক।হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে ওয়েদারটা।
-আপনার বৃষ্টি ভালো লাগে?
-অতটা খারাপ ও লাগে না।
-বৃষ্টিতে ভিজেছেন কখনো?
-না।
-ওমা!সেকি!বৃষ্টিতে ভিজেননি কখনো?ফুটবল খেলেননি কখনো বৃষ্টিতে?
-না।খেলিনি।
-আচ্ছা আপনি এরকম গাব গাছ কেন?আমিই বক বক করছি।
-আসলে কি বলব বুঝতে পারছিনা।
-লাইব্রেরীতে যেয়ে যখন বসে থাকেন?কিংবা ক্যাম্পাসে যখন আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ান?তখন বলতে ইচ্ছা করে কিছু?
-না মানে...
-শুনুন আমি আপনার মত গাধা না।একটা মেয়ে ঠিক বুঝতে পারে তার চারপাশে কি হচ্ছে।তবু তাকে চুপ করে থাকতে হয়।সব বিষয় নিয়ে মাতামাতি করার স্বাধীনতা একটা মেয়েকে দেয়া হয়নি।
-তুমি খুব গুছিয়ে কথা বল।
-তুমি?আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলো?
-ও সরি।কিছু মনে করবেন না।
-সরি বলতে হবে না।সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়।বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই কোনো।আমার বাসায় যাওয়াটা বেশ দরকার এখন।দেরী হলে সমস্যায় পড়তে হবে।একটা রিক্সা ঠিক করে দিনতো।
-এখানে তো রিক্সা নেই।
-রিক্সা নেই তা আমিও দেখতে পাচ্ছি।সে জন্যই আপনাকে বলছি।
-আমি ছাতা আনিনি।
-আপনাকে বৃষ্টিতে ভিজেই যেতে বলছি।যাবেন নাকি গাবগাছের মত দাঁড়িয়ে থাকবেন?
-আচ্ছা যাচ্ছি।

বৃষ্টিতে ভিজেই মেয়েটাকে রিক্সা ঠিক করে দিলো রাহাত।অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে ওর মাঝে।রিক্সা চলতে শুরু করেছে।রিক্সার চাকার গতিতে পিচঢালা পথে বৃষ্টির পানি ছিটকে পড়ছে।রাহাত তাকিয়ে আছে সেদিকে।একটু যেতেই রিক্সা থামিয়ে পেছন ফিরে তাকালো মেয়েটা।"আর বৃষ্টিতে ভিজে কাজ নেই চলে আসুন।আপনাকে সামনে নামিয়ে দিব।"রাহাত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।খুব অল্প একটু দূরত্ব।তবু সে চায়না পথটা শেষ হয়ে যাক।অনুভবের মাঝে এ ভালোলাগা নিয়ে অনন্তকাল চলতে চায় সে।মেয়েটার মুখেও এক স্মিত হাসি।এই হাসির অনুভূতি বড়ই আনন্দের।

বৃষ্টির আগে আকাশে মেঘ জমে।ভালোবাসার ক্ষেত্রে জমে অনুভূতি।সে অনুভূতি খেলা করে অনুভবের মাঝে।মুখে প্রকাশ না পেলেও অনুভবের মাঝে সে বেড়ে চলে।বেড়ে চলে অপেক্ষার কোনো পথচলা হয়ে,আনন্দের কোনো স্মিত হাসি হয়ে।

মায়াবতী টিপান্নিতা কাঁদছে আকাশ

Related image

আজ প্রীতির বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে পুরো বাড়ি জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দিয়ে বাড়ি ভরপুর।প্রীতি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছে। তার মা বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে। যদি ও বিয়েতে প্রীতির কোন মতামত নেয়া হয় নি। লাল বেনারশি শাড়িতে প্রীতিকে সত্যিই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

লাল রং টায় প্রীতিকে বরাবরই সুন্দর মানায়। দূরে দাঁড়িয়ে সায়ন মুগ্ধ হয়ে প্রীতিকে দেখছে। সায়ন কল্পনায় যেমনটা দেখেছিল তার থেকে ও একটু বেশীই সুন্দর
লাগছে আজ। সায়ন প্রীতির ক্লাসমেট এবং অনেক ভাল বন্ধু।

যদিও এই বন্ধুত্বের মাঝে কখন যে মনে মনে প্রীতিকে ভালোবেসে ফেলেছে তা সে নিজে ও জানে না। কিন্তু কখনো সেই ভাল লাগার কথা প্রীতিকে বলার মত সাহস পায় নি। যদি সে আবার তাকে ভুল বোঝে তাই। বিয়ের অনুষ্ঠানে সায়ন আসতে চায় নি। প্রীতির অনেক চাপাচাপির কারণেই তার আজ আসা।

সবাই বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু সায়ন চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে প্রীতিকে দেখছে। এরই মাঝে অন্যান্য বন্ধুরা তাকে কয়েকবার করে ডেকে গিয়েছে কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। কেন জানি সায়নের মনে হচ্ছে যে আর কোন দিন

সে প্রীতিকে দেখতে পাবে না।প্রীতি আজকের পরে থেকে অন্য কারো হয়ে যাবে।
আর কখনো হয়ত মন খুলে প্রীতির সাথে কথা বলতে পারবে না, অকারণে ঝগড়া করতে পারবে না। হঠাৎ সব কিছু শূণ্য শূণ্য লাগছে। মনে হচ্ছে জীবন থেকে অনেক মূল্যবান কিছু সে হারিয়ে ফেলছে। তার কল্পনার মনের মানুষটা আজ তার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে তার পাশে এসে প্রীতি দাঁড়িয়েছে সেটা সে খেয়ালই করে নি।

কিরে হাবার মত এই খানে একা একা দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান? সায়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, কিছুনা, এমনি দাঁড়িয়ে আছি। তুই এই খানে ক্যান? একটু পরে তো বর যাত্রী চলে আসবে।

প্রীতি একটু হেসে বলল, হুম আসবে। তোকে অনেক্ষণ থেকে একা একা চুপ চাপ এই খানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাম। তোর কি কোন কারণে মন খারাপ? সায়ন মুচকি হেসে বলল, আরে নাহ।

এমনি দেখতেছিলাম বিয়ের আয়োজন। ভাবতেছিলাম যে কি কি খাব তোর বিয়েতে। এই মূহর্তে সায়নের ইচ্ছে করছে প্রীতির হাত দুটো ধরে বলতে যে তোকে অনেক ভালোবাসি, তুই অন্য কারো হবি এটা মেনে নিতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

তোকে ছাড়া বাকিটা জীবন চলতে পারব কিন্তু সেটা হবে অনেক কষ্টের। এই কথা গলো বলার মত সাহস সায়ন এর হয়ত কখনোই হবে না।

আচ্ছা প্রীতি একটা কবিতা শুনবি শেষবারের মতন?? হু বল,প্রীতির কথা শেষ হতেই সায়ন ভরাট কন্ঠে আবৃতি শুরু করে,

"তোমাকেও উঠিয়েছিল, আমাকেও উঠিয়েছিল, পার্থক্য ছিল শুধু এতটুকুই; তোমাকে পালকি তে আর আমাকে খাটিয়ায়।

সুর দুই জায়গাতেই বেজেছিল, পার্থক্য ছিল শুধু এতটুকুই; এক জায়গায় আনন্দের আর অপর দিকে বেদনার।
দোয়া-কালাম দুই জায়গাতেই পড়েছিল, পার্থক্য ছিল শুধু এতটুকুই; তোমার ওখানে কাজি ছিল আর আমার এখানে মৌলভি।

তোমাকেও সাজিয়েছিল, সাজিয়েছিল আমাকেও, পার্থক্য ছিল শুধু এতটুকুই; তোমাকে লাল বেনারশি দিয়ে আমাকে সাদা কাফন দিয়ে।

একটি প্রেমের সম্পর্কের বিয়োগাত্মক যবনিকাপাত, কি নির্মম উপহাস এই নির্দয় পৃথিবীর!!!
একদিকে প্রেমিকের শেষকৃত্য, অন্যদিকে প্রেমিকার বিবাহ উৎসব।"
সায়ন থামতেই প্রীতি বলে এই আজ তোর কি হয়েছে,এটা কেমন কবিতা??
সায়ন হেসে বলে এটা বিয়োগাত্মক কবিতা হা হা হা...ও তুই বুঝবি না।থাক বাপু ওতো বুঝতেও চাই না তুই সত্যি একটা মাথা পাগল।

তুই থাক আমি যাই বলেই প্রীতি চলে যেতে উদ্ধত হয়,তাকে থামিয়ে দিয়ে সায়ন বলে এই শুন এই বিয়েতে কি তুই সত্যি খুশী?

আজব খুশী হব না কেনো! ছেলেটাকে আমার ও পছন্দ তাছাড়া মা-বাবা সবাই রাজি।হঠাৎ এ প্রশ্ন করলি যে?
প্রীতির জবাবে সায়ান বলে আরে না এমনি,ভাবলাম বাংলা সিনেমার মত তোর অমতে বিয়ে হচ্ছে কিনা।
হেসে প্রীতি বলে না বন্ধু দিন বদলাইছেনা?এখন তাই হচ্ছে সবাই যা চাচ্ছে।প্রীতি চলে যায়.......

সায়ন ভাবে আসলেই তো তাই হচ্ছে যা প্রীতি চাইছে,তবে কেনো শুধু শুধু আশায় থাকা?ভাল থাক প্রীতি,সে না হয় একাই ভালবাসা পুষে যাবে।সব প্রেমের শুরু বন্ধুত্বে হয়,কিন্তু সব বন্ধুত্ব প্রেমে বদল হয়না।তাদের সম্পর্কটাও হয়ত সেরকম।

সবার সব ইচ্ছা কি চাইলেই সম্ভব হয়?আচ্ছা সায়নকে যদি এই মুহূর্তে কেউ বলতো তোমার কোন ইচ্ছাটা পূরণ করতে চাও বলো?সে কি বলতো?

মানুষের যেনো আর কখনও কোনো ইচ্ছে না হয় এই ইচ্ছেটা।ভালবেসেও না বাসার অভিনয় করাটা যে কি দুঃসহ তা আজ প্রীতির বিয়েতে এসে সায়ন বুঝতে পারছে।নাহ আর এখানে থাকা যাবেনা বরযাত্রীরা হয়ত এসেই গিয়েছে।
উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটেই যাচ্ছে সে প্রীতির বাড়ির কোলাহল ছেড়ে,প্রীতিকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে।
এতক্ষণে হয়ত বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেছে,আজ থেকে তাদের চলার গতিপথ আলাদা।ক্লাস শেষে আর বিরামহীনভাবে হাঁটা হবেনা কোনদিন,ক্যাম্পাসে আর
বসবে না আড্ডার আসর।সব ছেড়ে আজ যেন প্রীতি অনেক অনেক দূরের মানুষ।

যে জানবেনা কোনদিন কাছে থেকেও কেউ একজন তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছিল।বাসের সিটে বসে একটা ছেলে অঝর ধারায় কাঁদছে,বাসের সবাই কৌতুহলী হয়ে বারবার তাকাচ্ছে।কিন্তু কেউ জানেনা এই
ছেলেটা এভাবে কেন কাঁদছে!

গভীর দু:খ থেকে নিঃসৃত যে কান্না,যে কান্না কষ্ট ব্যথা অপ্রাপ্তির আর যন্ত্রণার।সায়নের প্লে লিস্টে ফুল ভলিউমে তখন বাজছে অহেতুকের গান যে গান অব্যক্ত বেদনার ..........

"বন্ধু আমার চুলগুলো দেখ কেমন এলোমেলো,তুই কাছে নেই শান্ত আমি কোথায় যে পালাবো।তোর ই ঠোঁটের ডান দিকের ঐ ছোট্ট কালো তিল একটু ছুঁতেই মনের মাঝে উষ্ণতার মিছিল।তুই নামের এক রঙে আঁকা আমার এ পৃথিবী বলনা বন্ধু আছিস কোথায় কবে আমার হবি।

স্বপ্নগুলো দিচ্ছে ঝাড়ি রাখছি কেনো দূরে,তোকে ছাড়া স্বপ্নগুলো স্বপ্ন হয় কি করে।সময়টার ও মনটা খারাপ আজ বিচ্ছেদের অনশন,তোর গল্পটা লিখতেই হবে মন চাইবে যখন।চাঁদের আলো জানালাতে রয়েছে দাঁড়িয়ে এই যে বুঝি তুই এসে হাতটা দিল বাড়িয়ে।

তুই নামের এক রঙে আঁকা আমার এ পৃথিবী বলনা বন্ধু আছিস কোথায় কবে আমার হবি।"
সুখে থাকো প্রীতি,ভাল থাক শেষে লেখা ইতি। সায়াণ্হের শূণ্যবিন্দুতে পূর্ণ হোক সব অপ্রাপ্তি।সায়ন বর্তে থাকো এটাই শুধু বলবো,শেষমেশ তোমার বিচ্ছেদ ই দিলাম।অতীতের কষ্ট ভবিষ্যতের আনন্দ হয়ে ছড়াক।

আর উল্লেখিত কবিতাটা অশ্রু ভাইয়ের 'উপহাসের পৃথিবী' না বলেই দিয়ে দিলাম,আদরের বোন তো তাই আমার সাত খুন মাফ হাহাহা